ই-সিম কি? ই সিমের ব্যবহারের সুবিধা কি কি? বর্তমানে কোন ব্রান্ডের ফোনে e-SIM চালু রয়েছে?

Home BD info
0

আমরা যাকে SIM বলে থাকি তার অর্থ হচ্ছে “Subscriber Identity Module” একে সংক্ষেপে সিম বলা হয়। একটি চিপযুক্ত প্লাস্টিক কার্ড যা মোবাইল ফোনে লাগানো থাকে এটা আমরা সবাই জানি। যারা একাধিক মোবাইল অপারেটরের সিম ব্যবহার করেন তারা মূলত এই কার্ডটি মোবাইল সেটে পরিবর্তন করে নেটওয়ার্ক অপারেটর সুইচ করে থাকেন। কিন্তু ই-সিম ব্যবহারের ফলে আপনাকে আর সিম কার্ড পরিবর্তন করতে হবে না। অর্থাৎ e-SIM ব্যবহারকারী খুব সহজেই যে কোন অপারেটরে সুইচ করতে পারবেন।

 

ই সিম কি? ই সিমের ব্যবহারের সুবিধা কি কি? বর্তমানে কোন কোন সেটে e-SIM চালু রয়েছে?

প্রচলিত সিম কার্ডগুলোর মাধ্যমে নির্দিষ্ট মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হওয়া ছাড়াও ফোন কল, মেসেজ পাঠানো কিংবা ইন্টারনেট সংযোগ করা যায়। সিম অন্য কোন মোবাইল সেটে লাগালে সিমে সেভ করা কন্ট্রাক নাম্বার ফিরে পাওয়া যায়। সুতরাং সিম কার্ড হচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করার মাধ্যম।

ভয়েস কন্ট্রোল ডিভাইস 

বাংলাদেশে জনপ্রিয় তিনটি ভয়েস কন্ট্রোল ডিভাইস। বিস্তারিত জানুন এখানে


সিম কার্ড কি?

ই-সিম কি? এটি কিভাবে কাজ করে যদি বুঝতে চান? তাহলে আপনাকে আগে জানতে হবে প্রচলিত সিম কার্ড সম্পর্কে। সাধারণত ফোনের একটি স্পেশাল ট্রে তে ইনসার্ট করা থাকে এই সিম কার্ডটি। এটি মোবাইল অপারেটররা সরবরাহ করে থাকে।

সিমের মধ্যে ডিভাইস ইউনিক সিরিয়াল নাম্বার, আইএমইআই, আইসিসিআইডি, অথেনটিকেশন কি, ডিভাইস পিন, এসএমএস ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।

সুতরাং সিমকার্ড একটি ছোট প্লাস্টিকের কার্ড এবং এর এক কোনে নচ থাকে। এছাড়াও একটি সার্কিট থাকে যা দেখতে সোনালী দেখায়। এটি ফোনের মাদারবোর্ড সহ গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য বহন করে।

প্রতিটি সিমের জন্য একটি করে নাম্বার থাকে, যা মোবাইল অপারেটেররা (রবি, জিপি, টেলিটক) প্রদান করে। প্রচলিত এই সিমগুলো এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ব্যবহার করা সম্ভব।

 

What is e-SIM? ই-সিম কি?

 সিম কি, এটি কিভাবে কাজ করে তা উপরের আলোচনা থেকে জেনেছি। এখন প্রশ্ন হলো ই-সিম কি? E-SIM হচ্ছে এক নতুন ধরণের প্রযুক্তি, যা প্রচলিত সিম ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে সক্ষম হয়েছে। তবে প্রচলিত সিমের মতো ই-সিম রিমুভ করা যায় না কিংবা অন্য কোন ফোনে প্রবেশ করা যায় না।

ই-সিম সরাসরি মোবাইল সেটের মধ্যে এমবেডেড অর্থাৎ যুক্ত থাকে। ই-সিম এর মধ্যে থাকা তথ্য রি-রাইটেবল বা পরিবর্তন যোগ্য। এর অর্থ হচ্ছে সিম পরিবর্তন করা ছাড়াই আপনি মোবাইল অপারেটর পরিবর্তন করতে পারবেন ই-সিম ব্যবহার করে।

ই-সিমের এমন সুবিধার ফলে অপারেটরগুলোর আর প্রচলিত সিম এর প্রয়োজন পড়বে না, দূর ভবিষ্যতে এমনটা হতে পারে। ই-সিম এ একাধিক অপারেটরের তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে এবং আপনি সহজেই যে কোন অপারেটরে সুইচ করে নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে পারবেন।

বর্তমানে ডুয়াল-সিম ফোনসমূহে অনেক ক্ষেত্রে সেকেন্ড সিম হিসাবে ই-সিম এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। মোবাইল অপারেটরগুলোও ই-সিম সিস্টেম চালু করতে চলছে। সকল মোবাইল সেটে এই সুবিধা পাওয়ার না গেলেও ভবিষ্যতে সকল স্মার্ট ফোনগুলোতে এই সুবিধা পাওয়া যাবে।

আরো জানুন:

গুগল ম্যাপের সাহায্যে অপরিচিত জায়গায় কিভাবে বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করবেন?

মোবাইল চুরি হলে কিংবা হারিয়ে গেলে কিভাবে গুগল একাউন্ট ডিলিট করবেন?

ইউটিউব ভিডিও কিভাবে ডাউনলোড করবেন?

মোবাইল প্রাইজ কোথায় কিভাবে জানবেন?


ই-সিমের সুবিধা কি?

ই-সিমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে মোবাইল ফোনে বেশ সহজেই নেটওয়ার্ক অর্থাৎ মোবাইল অপারেটর পরিবর্তন করা যাবে। অপারেটর পরিবর্তন করার জন্য নতুন একটি সিম ক্রয় করে সেটি ফোনে প্রবেশ করার প্রয়োজন হবে না।

ই-সিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিম ইজেক্টর টুল দিয়ে সিম রিমুভ করে নতুন সিম ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। এটি ব্যবহার করে এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে সহজেই সুইচ করতে পারেন সহজেই।

একটি ই-সিমে কমবেশি পাঁচটি ভার্চুয়াল সিম কার্ড এর তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব। এরফলে যে সকল এলাকাতে নেটওয়ার্ক সিগনাল নেই, এমন এলাকাতে সে সকল সিমের নেটওয়ার্ক আছে, সেই সিমে সহজেই সুইচ করা যাবে ই-সিমের কল্যাণে।

বিশেষ করে ভ্রমণ করার সময় লোকাল নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করা সহজ মাধ্যম হবে ই-সিম। কেননা ফিজিক্যাল সিম পরিবর্তন করা ছাড়াই নেটওয়ার্ট পরিবর্তন করা যাবে সহজেই।

এক স্লটে একাধিক সিম ব্যবহারের পাশাপাশি ডুয়াল-সিম সুবিধা মোবাইল সেটসমূহে ই-সিম ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ ফোনে প্রচলিত একাধিক সিম ব্যবহার করা গেলেও ই-সিম ব্যবহার করতে পারবেন।

ব্যাক্তিগতভাবে একটি নাম্বার এবং ব্যবসায়িকভাবে আলাদা নাম্বার ব্যবহার করতে চাইলে আপনার জন্য e-SIM একটি চমৎকার সুবিধা দিবে। এছাড়াও এই সিম ব্যবহারের জন্য ফোন খোলা-খোলির প্রয়োজন নেই। তাই ধুলাবালি থেকে মোবাইল সেট থাকবে বেশি সুরক্ষিত।

আবার প্রচলিত সিমগুলোর চেয়ে ই-সিম আঁকারে বেশ ছোট, ফলে সাধারণভাবেই ফোনে স্পেস বৃদ্ধি হবে। আর এই স্পেস স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারগুলো ব্যাটারি সাইজ বাড়াতে কিংবা নতুন ফিচার যুক্ত করে আরো সুবিধা এনে দিতে পারে।

স্মার্টফোনের সাইজ কমিয়ে আনার পাশাপাশি স্মার্টওয়াচ বা এই জাতীয় ছোট ডিভাইসগুলোর মধ্যে ই-সিম ব্যবহার বেশ সুবিধাজন হতে পারে। অবশ্য ইতিমধ্যে অ্যাপল তাদের স্মার্টওয়াচ এর বিভিন্ন সিরিজে ই-সিম যুক্ত করেছে। স্যামসাং কোম্পানী তাদের স্যামসাং গিয়ার এস২ড ও স্যামসাং গিয়ার এস৩ স্মার্টওয়াচে ই-সিম যুক্ত করেছে।


e-SIM এর অসুবিধা কি?

যে কোনো বিষয়ের সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও থাকে। তাই ই-সিম এর ক্ষেত্রেও তা ব্যাতিক্রম হয় নি। এর কিছু ডাউনসাইড রয়েছে, ফলে এটি এখনো মেইনস্ট্রিম হয়ে ওঠেনি।

প্রথমত ই-সিম শুনতে বেশ সহজ মনে হলেও এটি ব্যবহার করে ডিভাইস সুইচ করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। প্রচলিত সাধারণত সিমের ক্ষেত্রে কোনো কারণে যদি মোবাইল সেট কাজ না করে,  তাহলে সিমটি বের করে অন্য ডিভাইসে ইনসার্ট করলেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন-কন্ট্রাক নাম্বার উদ্ধার করা যায়।

অপরপক্ষে ই-সিমের ব্যবহারের ফলে যদি ফোন সেটের কোন সমস্যা হয়, তাহলে ই-সিমে থাকা তথ্য উদ্ধার করা তেমন সহজ নয়।

আপনি যদি সন্দেহ করেন যে, সিমের সাহায্যে আপনার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তাহলে প্রচলিত সাধারণ সিমটি সহজেই খুলে ফেলতে পারেন। কিন্তু ই-সিমের ক্ষেত্রে এমন কোনো সুবিধা নেই। তবে ছিনতাইকারীরা কোনো তথ্য মুছে ফেলতে পারবে না। তাই এটি একটি ভাল দিক বলা যেতে পারে।


সকল নেটওয়ার্ক কি ই-সিম সাপোর্ট করে?

না, বর্তমানে সকল নেটওয়ার্ক e-SIM সাপোর্ট করে না। তবে কিছু দিনের মধ্যেই এই প্রযুক্তি স্ট্যান্ডার হয়ে দাঁড়াবে।

অদূর ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি হয়তো আরো কিছু সুবিধা নিয়ে আসতে পারে।

বাংলাদেশে কি e-SIM সুবিধা রয়েছে?

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল টেলিকম অপারেটর ই-সিম সুবিধা দিচ্ছে না । তবে গ্রামীনফোন খুব সম্প্রতি ই-সিম সেবা প্রথমবারের মতো চালু করেছে।

অর্থাৎ বাংলাদেশে ই-সিম সুবিধা ফোন ব্যবহারকারীরা গ্রামীনফোনের ই-সিম সেবা গ্রহণ করতে পারেন।

বর্তমানে ই সিম সমর্থিত স্মার্টফোন কোনগুলি?

বর্তমানে সকল স্মার্টফোনগুলোতে ই-সিম সুবিধা না থাকলেও বাজারে কিছু ই-সিম সুবিধা মোবাইল সেট পাওয়া যাচ্ছে। যে স্মার্টফোনগুলে ই-সিম সুবিধা পাওয়া যায় তা নিছে উল্লেখ করা হলো।

অ্যাপল ডিভাইস

আইফোন ১১ সিরিজ থেকে ই-সিম সুবিধা চালু করেছে। এরপরবর্তী সিরিজগুলোতে এই সুবিধা নেওয়া যাবে। আইফোনের ই-সিম সমর্থিত সেটগুরি হচ্ছে-
আইফোন ১১ সিরিজঃ আইফোন ১১, আইফোন ১১ প্রো, আইফোন ১১ প্রো ম্যাক্স।
আইফোন ১২ সিরিজঃ আইফোন ১২ মিনি, আইফোন ১২, আইফোন ১২ ম্যাক্স, আইফোন ১২ ম্যাক্স প্রো।
আইফোন ১৩ সিরিজঃ আইফোন ১৩ মিনি, আইফোন ১৩, আইফোন ১৩ প্রো, আইফোন ১২ প্রো ম্যাক্স।
আইফোন এক্স সিরিজঃ আইফোন এক্সএস, আইফোন এক্সএস ম্যাক্স, আইফোন এক্সআর।
আইফোন এসই সিরিজঃ আইফোন এসই মডেল (কেবল ২০২০ এ ই সিম সমর্থন করে)

আইপ্যঅডঃ আইপ্যাড এয়ার (৩য় জেনারেশন), আইপ্যাড প্রো (৩য় জেনারেশন), আইপ্যাড মিনি (৫ম জেনারেশন)।
অ্যাপল ওয়াচ: ওয়াচ সিরিজ ৩,৪,৫, ও ৬ ইত্যাদি ডিভাইসগুলোতে ই-সিম সাপোর্ট করে।

অ্যান্ড্রোয়েড ডিভাইস

অ্যান্ড্রোয়েডের অনেক ব্রান্ড এর বেশ কিছু মডেল ই সিম সাপোর্ট করে। যেমন স্যামসাং, গুগল পিক্সেল, হুয়াওয়ে, অপো ইত্যাদি। বর্তমান বাজারে অ্যান্ড্রোয়েডের যে মডেলগুলোতে সিমের এই নতুন প্রযুক্তি সাপোর্ট করে তার একটি চিত্র নিচে তুরে ধরা হলো।

স্যামসাং ফোল্ড ও ফ্লিপ ফোনঃ স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোল্ড, স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড২ ৫জি, স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড৩ ৫জি, স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ।

স্যামসাং ২০ সিরিজঃ স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২০, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২০+, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২০ আলট্রা, স্যামসাং নোট ২০+ ইত্যাদি।

স্যামসাং ২১ সিরিজঃ স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ২১, স্যামসাং গ্যালাক্সি২১+ ৫জি, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২১+ আলট্রা ৫জি।

গুগল পিক্সেলঃ গুগল পিক্সেল বেশ কিছু মডেলে e-SIM সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন- গুগল পিক্সেল 3 এবং 3 এক্সএল, গুগর পিক্সেল 3a এবং 3a XL, গুগল পিক্সেল 4 ও 4 XL, গুগল পিক্সেল 4A ৫জি, গুগল পিক্সেল 2 ও 2 এক্সএল, গুগল পিক্সেল 5, গুগল পিক্সেল 5A, গুগল পিক্সেল ৬, গুগল পিক্সেল ৬ প্রো ইত্যাদি।

হুয়াওয়ে ব্রান্ডঃ স্মার্টফোনের হুয়াওয়ে ব্রান্ডের কিছু সেটে ই-সিম সাপোর্ট করে। যেমন- হুয়াওয়ে পি৪০, হুয়াওয়ে পি৪০ প্রো, হুয়াওয়ে পি৫০ প্রো, হুয়াওয়ে মেইট ৪০ প্রো ইত্যাদি।

অপোঃ অপো ব্রান্ডের কিছু মডেলে ই-সিম সমর্থন করে। যেমন- অপো ফাইন্ড এক্স৩ প্রো, অপো রিনো ৫এ, অপো রিনো ৬ প্রো ৫জি ইত্যাদি।

অন্যান্য ব্রান্ডঃ উল্লেখিত ব্রান্ডগুলো ছাড়াও অন্যান্য ব্রান্ডের ফোনেও সিমের নতুন প্রযুক্তি সমর্থন করে। যেমন- মটোরোলা রেজার ২০১৯, নু মোবাইল এক্স৫, জেমিনাই পিডিএ, রাকুটেন মিনি, সনি এক্সপেরিয়া ১০ থ্রি ইত্যাদি।

লক্ষণীয় বিষয়

বর্তমানে স্মার্টফোনের সকল ব্রান্ড ও মডেলগুলোতে e-SIM প্রযুক্তি না থাকলেও কিছু ব্রান্ডের মোবাইলে এই প্রযুক্তি চালু হয়েছে।  অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আরো অনেক মডেল বাহির হবে যেগুলো ই সিম ব্যবহার করা যাবে।

উল্লেখিত মডেলগুলোর ক্ষেত্রে জেনে রাখা ভাল যে, আইপ্যাড ও আইফোনের মডেলগুলো সর্বোচ্চ ২০ টি ই সিম সমর্থন করে এবং অ্যাপ ওয়াচ বা অন্যান্য ছোট ডিভাইসগুলোতে একটি করে ই-সিম সমর্থন করে।

মনে রাখুন, সাধারণ সিম ব্যবহার করার বেলায় যেমন নেটওয়ার্ক আনলক্ড ফোন প্রয়োজন হয়, তেমনি ই সিম ব্যবহার করতে একই নিয়ম মানতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !