Latest Post

ভূমিকা

ইসলামে সৌন্দর্যচর্চা ও পরিচ্ছন্নতা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিভিন্ন হালাল উপায়ে নিজেকে সাজানো, পরিচ্ছন্ন রাখা এবং শরীরের যত্ন নেওয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে অনুমোদিত। মেহেদি ইসলামের শুরুর সময় থেকেই মুসলিম সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে। বিশেষ করে মুসলিম নারীদের জন্য এটি একটি সৌন্দর্য বৃদ্ধির সুন্নাত স্বীকৃত উপাদান। তবে, পুরুষদের জন্য এর ব্যবহার নিয়ে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে।

ইসলামে মেহেদি ব্যবহারের বিধান নারী, পুরুষ ও শিশুর জন্য বিস্তারিত ব্যাখ্যা

এই ইনফোটিতে আমরা ইসলামি শরিয়তের আলোকে মেহেদির ব্যবহার, এর বিধান, বিভিন্ন মতামত এবং কিছু স্বাস্থ্যগত দিক আলোচনা করব।


মহিলাদের জন্য মেহেদির বিধান

✅ ইসলামে মহিলাদের জন্য মেহেদি ব্যবহারের অনুমোদন

নারীদের জন্য হাত-পায়ে মেহেদি ব্যবহার করা জায়েজ, বরং এটি সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নারীদের মেহেদি ব্যবহারে উৎসাহিত করেছেন।

মহিলাদের জন্য মেহেদির বিধান


📖 হাদিস:
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: "أَتَتِ امْرَأَةٌ النَّبِيَّ ﷺ بِكِتَابٍ مِنْ وَرَاءِ سِتْرٍ، فَقَبَضَ يَدَهُ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَدَدْتُ إِلَيْكَ يَدِي بِكِتَابٍ فَلَمْ تَأْخُذْهُ؟ فَقَالَ: إِنِّي لَمْ أَدْرِ أَيَدُ امْرَأَةٍ أَمْ يَدُ رَجُلٍ؟ قَالَتْ: بَلْ يَدُ امْرَأَةٍ، قَالَ: لَوْ كُنْتِ امْرَأَةً لَغَيَّرْتِ أَظْفَارَكِ بِالْحِنَّاءِ."
📚 (سنن أبي داود، حديث: ٤١٦٦، سنن النسائي، حديث: ٥٠٨٩)

🔹 অর্থ: আয়েশা (রা.) বলেন— এক মহিলা নবী (ﷺ)-এর কাছে একটি চিঠি নিয়ে আসলেন এবং পর্দার আড়াল থেকে তাঁর হাতে তুলে দিলেন। নবী (ﷺ) বললেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, এটি পুরুষের হাত নাকি নারীর হাত।’ তখন মহিলা বললেন, ‘আমি একজন নারী।’ তখন নবী (ﷺ) বললেন, ‘তুমি যদি নারী হও, তবে তোমার হাতের নখ মেহেদি দিয়ে রাঙিয়ে নাও।’

📖 অন্য হাদিস:
إِنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ: "إِذَا اخْتَضَبَتِ الْمَرْأَةُ بِالْحِنَّاءِ فَلَا تَخْلَعُهُ حَتَّى تَحْتَجِبَ."
📚 (سنن أبي داود، حديث: ٤١٦٥)

🔹 অর্থ: নবী (ﷺ) বলেছেন, "যখন কোনো নারী মেহেদি ব্যবহার করবে, তখন সে যেন সেটি ঢেকে রাখে।"

✅ মহিলারা পায়ে মেহেদি ব্যবহার করতে পারবে ?

অনেকেই মনে করেন যে, পায়ে মেহেদি ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে, ইসলামে এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং, প্রাচীনকালে মহিলারা হাতে ও পায়ে মেহেদি ব্যবহার করতেন এবং এটি সৌন্দর্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত হতো।

📖 হাদিস:
“নারীরা তাদের হাত ও পায়ে মেহেদি লাগাতে পারে।”
📚 (সুনান আবু দাউদ)

❌ নারীদের জন্য মেহেদির ডিজাইন সংক্রান্ত সতর্কতা

✅ এমন ডিজাইন ব্যবহার করা যাবে না যা অন্য ধর্মের প্রতীক বা সংস্কৃতির সাথে মিলে যায়।
✅ ইসলামে অশ্লীলতা বা অপ্রয়োজনীয় সৌন্দর্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ, তাই অতি চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয় ডিজাইন এড়িয়ে চলা উত্তম।
✅ মেহেদির কারণে যদি কেউ অহংকার বা অন্যদের আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে, তবে তা মাকরুহ হয়ে যাবে।



পুরুষদের জন্য মেহেদির বিধান

❌ পুরুষদের হাতে-পায়ে মেহেদি ব্যবহার নিষিদ্ধ

ইসলামে পুরুষদের জন্য সাজসজ্জার ক্ষেত্রে নারীদের অনুকরণ করা নিষিদ্ধ। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য পুরুষদের হাতে বা পায়ে মেহেদি লাগানো হারাম গণ্য করা হয়েছে।

পুরুষদের জন্য মেহেদির বিধান


📖 রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:

لَعَنَ اللَّهُ المُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ.
📚 (صحيح البخاري، حديث: ٥٨٨٥)

🔹 অর্থ: “আল্লাহ সেই পুরুষদের প্রতি লানত করেন, যারা নারীদের অনুকরণ করে এবং সেই নারীদের প্রতি, যারা পুরুষদের অনুকরণ করে।”

📖 ফিকহি মতামত:
📌 শাইখ ইবনু বায (رَحِمَهُ اللَّهُ) বলেন:
لَا يَجُوزُ لِلرَّجُلِ أَنْ يَتَشَبَّهَ بِالنِّسَاءِ فِي شَيْءٍ، لَا فِي الْحِنَّاءِ، وَلَا فِي غَيْرِهِ مِنَ الزِّينَةِ.
📚 (مجموع فتاوى ابن باز، ٢٩/٤٧)

🔹 অর্থ: "পুরুষদের জন্য নারীদের অনুকরণ করা বৈধ নয়, হোক তা মেহেদি ব্যবহারের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো সাজসজ্জায়।"

📖 রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
"আল্লাহ সেই পুরুষদের প্রতি লানত করেন, যারা নারীদের অনুকরণ করে এবং সেই নারীদের প্রতি, যারা পুরুষদের অনুকরণ করে।"
📚 (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৮৫)

📖 হাদিস:
“পুরুষদের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।”
📚 (নাসাঈ, হাদিস: ৫০৮৯)

📖 ফিকহি মতামত:
📌 শাইখ ইবনু বায (রহ.) বলেন:
"মুমিন পুরুষের জন্য নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা বৈধ নয়। তাই, হাতে-পায়ে মেহেদি ব্যবহার করা জায়েজ নয়।"
📚 (মাজমূঊ ফাতাওয়া, ২৯/৪৭)

✅ পুরুষদের দাড়ি ও চুলে মেহেদি ব্যবহার জায়েজ

যদিও হাত-পায়ে মেহেদি ব্যবহার পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ, তবে চুল ও দাঁড়িতে ব্যবহার করা বৈধ।

📖 রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
إِنَّ أَحْسَنَ مَا غَيَّرْتُمْ بِهِ الشَّيْبَ: الحِنَّاءُ وَالكَتَمُ.
📚 (صحيح مسلم، حديث: ٢١٠٢)

🔹 অর্থ: “তোমাদের চুল-পাকা পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে উত্তম জিনিস হলো মেহেদি ও কাটম।”

📖 আরেকটি হাদিস:
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: "إِنَّ خَيْرَ مَا غَيَّرْتُمْ بِهِ الشَّيْبَ الْحِنَّاءُ وَالْكَتَمُ."
📚 (سنن أبي داود، حديث: ٤٢٠٤)

🔹 অর্থ: “তোমাদের চুল-পাকা পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো মেহেদি ও কাটম।”


শিশুদের জন্য মেহেদির বিধান

শিশুদের জন্য মেহেদির বিধান


শিশুদের হাতে মেহেদি লাগানো জায়েজ
শিশুরা যদি আনন্দের জন্য মেহেদি ব্যবহার করে, তবে এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে ছেলে শিশুদের জন্য অতিরিক্ত সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহার না করাই ভালো।

📌 সতর্কতা:
✔ রাসায়নিকযুক্ত মেহেদি শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই প্রাকৃতিক মেহেদি ব্যবহার করা উত্তম।
✔ অতিরিক্ত ডিজাইন বা চমকপ্রদ রঙ পরিহার করা ভালো।



গর্ভবতী মহিলাদের জন্য মেহেদির বিধান

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য মেহেদির বিধান


✅ গর্ভবতী মহিলারা মেহেদি ব্যবহার করতে পারেন, তবে রাসায়নিকযুক্ত মেহেদি পরিহার করা উচিত।
✅ স্বাভাবিক মেহেদি গর্ভবতী নারীদের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং এটি ত্বক ঠান্ডা রাখার জন্য উপকারী হতে পারে।

📖 ফিকহি অভিমত:
قال العلماء: "لَا بَأْسَ لِلْمَرْأَةِ الْحَامِلِ أَنْ تَسْتَعْمِلَ الحِنَّاءَ إِذَا كَانَ طَبِيعِيًّا."
📚 (الفتاوى الإسلامية المعاصرة)

🔹 অর্থ: "গর্ভবতী নারীরা যদি প্রাকৃতিক মেহেদি ব্যবহার করেন, তবে এতে কোনো সমস্যা নেই।"


আরো পড়ুন


মেহেদি ব্যবহারের সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি

অ্যালার্জি: রাসায়নিকযুক্ত মেহেদি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ত্বকের সমস্যা: কিছু মানুষ মেহেদি ব্যবহারের পর লালচে ভাব, চুলকানি বা জ্বালাপোড়া অনুভব করতে পারেন।
রাসায়নিকের ক্ষতি: ব্ল্যাক হেনা (কালো মেহেদি) ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে এবং ত্বকে দাগ বা ফোসকা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রাকৃতিক মেহেদি ব্যবহার করা উত্তম এবং নিরাপদ।



উপসংহার

📌 নারীদের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদি ব্যবহার করা সুন্নাত এবং এটি বৈধ।
📌 পুরুষদের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদি ব্যবহার হারাম, তবে দাড়ি ও চুলে ব্যবহার করা জায়েজ।
📌 শিশুরা মেহেদি ব্যবহার করতে পারে, তবে রাসায়নিকযুক্ত মেহেদি পরিহার করা উচিত।
📌 গর্ভবতী মহিলারা প্রাকৃতিক মেহেদি ব্যবহার করতে পারেন।
📌 স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এড়াতে রাসায়নিকযুক্ত মেহেদি ব্যবহার না করাই ভালো।

💠 আল্লাহই সর্বোত্তম জানেন।

আরো ইনফো জানুন

অটিজম সম্পর্কে জানুন! এর জয় সম্ভব: সঠিক যত্ন, সচেতনতা ও পরিবারিক সমর্থনের গল্প

শিশুর জেদ ও রাগ সামলানোর উপায়: কারণ, সমাধান ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

গালি দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ: কারণ, পরিণতি ও করণীয়

বাচ্চাদের রাগ, জেদ ও দুষ্টমি শান্ত করার দুয়া: ধর্মীয় ও মানসিক পরামর্শ

প্রসবের পরে স্তন ঝুলে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত? জেনে নিন কার্যকরী সমাধান!

শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য: কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

 সাবুদানা কীভাবে রান্না করবেন?

সাবুদানা রান্নার সবচেয়ে সাধারণ এবং সহজ পদ্ধতিটি হলো সাবুদানা খিচুড়ি বা দুধ সাবু। নিচে ধাপে ধাপে রান্নার পদ্ধতি দেওয়া হলো—

সাবুদানা কীভাবে রান্না করবেন

১. সাবুদানা ভিজিয়ে নেওয়া:

  • ১ কাপ সাবুদানা ভালো করে ধুয়ে ২-৩ ঘণ্টা বা রাতভর পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
  • সাবুদানা ফুলে নরম হয়ে গেলে অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে নিন।
২. সাবুদানা খিচুড়ি:
  • কড়াইতে ঘি বা তেল দিয়ে সরিষা, কারিপাতা, কাঁচা লঙ্কা ভাজুন।
  • এতে সিদ্ধ করা আলু, চিনি, লবণ, হলুদ ও অন্যান্য মসলা দিন।
  • সাবুদানা দিয়ে ভালো করে মেশান ও ৫-৭ মিনিট রান্না করুন।
৩. দুধ সাবু:
  • ২ কাপ দুধ ফুটিয়ে নিন।
  • এতে ভেজানো সাবুদানা দিন এবং মাঝারি আঁচে নাড়তে থাকুন।
  • চিনি, এলাচ ও সামান্য কেশর দিয়ে ১০-১৫ মিনিট রান্না করুন।
সাবুদানা আরো অনেক ভাবে রান্নাকরে খাওয়াতে পারেন । কিন্তু এভাবে রান্না করলে অনেকটা হেলদি এবং পুষ্টিকর সমৃদ্ধ হয়।

বাচ্চাদের সাবু খাওয়ার উপকারিতা

সাবুদানা শিশুদের জন্য খুবই উপকারী কারণ এতে শক্তি, কার্বোহাইড্রেট ও হালকা প্রোটিন আছে। উপকারিতা হলো—
✅ সহজে হজম হয় এবং পেটের সমস্যা কমায়।
✅ শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায়, যা বাচ্চাদের শারীরিক বৃদ্ধিতে সহায়ক।
✅ হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে কারণ এতে ক্যালসিয়াম ও আয়রন থাকে।
✅ গরমে ঠান্ডা অনুভূতি দেয় এবং ডিহাইড্রেশন কমায়


সাবুদানা খেলে কি রোগা হওয়া যায়?

সাবুদানা মূলত উচ্চ কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার, যা ওজন বাড়ানোর জন্য বেশি কার্যকর। তবে যদি পরিমাণমতো খাওয়া হয় এবং ব্যালান্সড ডায়েটের সঙ্গে খাওয়া হয়, তবে ওজন কমানোও সম্ভব।
ওজন কমাতে চাইলে দুধ বা চিনির পরিবর্তে লবণ ও সবজি দিয়ে রান্না করুন।
ওজন বাড়াতে চাইলে দুধ, ঘি ও চিনি মিশিয়ে খান।


সাবুদানার উপকারিতা ও অপকারিতা

উপকারিতা:

  • দ্রুত শক্তি দেয় এবং ক্লান্তি কমায়।
  • পেটের সমস্যা কমায় ও হজমে সহায়তা করে।
  • গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
  • গ্লুটেন ফ্রি হওয়ায় অ্যালার্জির সমস্যা নেই।

অপকারিতা:

  • অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে।
  • খুব বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর
  • অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থাকতে পারে।

আসল সাবুদানা চেনার উপায়

  • আসল সাবুদানা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে সুন্দরভাবে ফুলে ওঠে এবং পুরোপুরি নরম হয়।
  • নকল সাবুদানা ফোটালে দুধের মতো সাদা পানি বের হয়
  • আসল সাবুদানার রং সাদা ও স্বচ্ছ হয়, নকলটি বেশি চকচকে হতে পারে।

সাবুদানা খেলে কি ঠান্ডা লাগে?

হ্যাঁ, সাবুদানার প্রকৃতি ঠান্ডা। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে, তাই গরমকালে খাওয়া ভালো। তবে যাদের ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেশি, তারা অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন


দুধ সাবু খাওয়ার উপকারিতা

  • পুষ্টিগুণ বেশি থাকে, বিশেষ করে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম
  • হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে
  • গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে কার্যকর।
  • হজমে সহায়ক এবং পেটের সমস্যা কমায়।

সাবুদানা খাওয়ার নিয়ম

✅ সকালে বা দুপুরে খাওয়া ভালো, কারণ এটি শক্তি দেয়।
✅ অতিরিক্ত চিনি ও দুধ মিশিয়ে না খাওয়াই ভালো, বিশেষ করে ওজন কমাতে চাইলে।
✅ ঠান্ডা প্রকৃতির বলে শীতে কম খাওয়া ভালো।
✅ বাচ্চাদের ও রোগীদের জন্য নরম ও সহজপাচ্যভাবে রান্না করা উচিত।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এবং বাচ্চাদের জন্য সাগুদানা অনেকটা উপকারি।

যেকোনো বাচ্চার ৬ মাস পার হলে বুকের দুধের পাশাপাশি বারতি খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন হয়।সেরেলাক যে বাচ্চাদের জন্য খুবই পুষ্টিকর তা আমরা সবাই জানি। অনেকেই বাজারের সেরেলাক খাওয়ান, কিন্তু সেগুলো আসলেই কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। আর বাজারো তৈরি সেরেলাক বাচ্চাদের পেটের সমস্যা করতে পারে । এছাড়াও এটি বেশ ব্যয়বহুলও। ঘরে তৈরি এই খাবারটি আপনার শিশুর জন্য খুবই উপকারী। এটি শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 

বাচ্চাদের সেরেলাক কি কি উপকরন দিয়ে এবং কিভাবে তৈরি করবেন

তাই আজ দেখে নিন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে বাড়িতেই কীভাবে সেরেলাক বানিয়ে নেওয়া যায়। এটি শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই সেরেলাকটি বানানোর সময় উপাদানগুলো আপনার শিশুর শারীরিক চাহিদা আনুযায়ী কমবেশি করে নিতে পারেন।

🥣 কেন ঘরে তৈরি সেরেলাক খাওয়াবেন?

✅ ১০০% প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি
✅ কোনোরকম প্রিজারভেটিভ বা কেমিক্যাল নেই
✅ শিশুর হজমক্ষমতা অনুযায়ী উপকরণ বেছে নেওয়া যায়
✅ তুলনামূলক কম খরচে স্বাস্থ্যকর খাবার

🥘 কী কী লাগবে?

🥣 উপকরণ

চাল ও ডাল:

১. আতব চাল ।                 (১পোয়া)
২. ভাতের চাল ।                (১পোয়া)
৩. পোলার চিকন চাল ।    (১পোয়া)
৪.  মুখ ডাল ।                    (আধা পোয়া)
৫. মসুরডাল ।                   (আধা পোয়া)
৬. মাসকালাই ।               (আধা পোয়া)
৭. বুটের ডাল ।                 (১কাপ)
৮. ছোলা ।                        (১কাপ)
৯. মুখ ডাল।                     (আধা পোয়া)
বাদাম ও শস্য:

১. গম                - ১কাপ
২.ভুট্টা                -১কাপ
৩. কাঠ বাদাম   -১কাপ
৪. কাজু বাদাম   -১কাপ
৫. চিনা বাদাম    ১কাপ
৬.আখরোট বাদাম -১কাপ
৭.সাগুদানা           -২কাপ
৮. ডাবলি              -আধা কাপ
৯.সাদা এলাচ         - ১০-১২ টি

🥘 তৈরির নিয়ম:

সাগুদানা বাদে বাকি সব উপকরন একখানে করে হাত দিয়ে মোতলিয়ে ঝেরে নিন। ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ৫ থেকে ৬বার। এর পর পরিস্কার কাপরে তুলে মেলে দিন একদম পাতলা করে। রোদে শুকাতে দিন। একদম করকরা করে শুকিয়ে নিবেন ।যেন ঝরঝরে  এবং মুচমুছে হয়। তারপর সেখানে সাবুদানা গুলো মিশিয়ে নিবেন ।

আর যদি রোদ না থাকে তাহলে  উপকরন গুলো আলাদা আলাদা ভাবে পানি  ধুয়ে পানি ছারিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে  করাইয়ে ভেজে নিবেন। অথবা ফ্যানের বাতাসে শুকাবেন।

✅সব  ইপকরনগুলো ব্লেন্ডার বা গ্রাইন্ডারে গুঁড়া করে নিন।
✅অথবা মেশিনে সব গুড়া করে নিতে পারেন।
✅অথবা বাংলার ঘরে ঘরে যে বাটনা আছে সেখানেও গুড়ো করে নিতে পারেন।
সংরক্ষণ: গুঁড়া করা মিশ্রণ কাচের বোতলে সংরক্ষণ করুন। এটি ফ্রিজে রেখে ২-৩ মাস ব্যবহার করা যাবে।
এয়ারটাইট কন্টেইনারে সংরক্ষণ করুন। এটি ৪-৬ মাস ব্যবহার করা যাবে।

🥄 বাচ্চাকে খাওয়ানোর নিয়ম:

1️⃣ এক কাপ দুধ ফুটিয়ে নিন।
2️⃣ ফুটন্ত দুধে ২ চা-চামচ সেরেলাক মেশান।
3️⃣ একটানা নাড়তে থাকুন, যাতে জমাট না বাঁধে।
4️⃣ পেস্টের মতো ঘন হলে নামিয়ে নিন। প্রয়োজনে আরও দুধ মেশানো যাবে।
5️⃣ হালকা গরম থাকতে থাকতেই শিশুকে খাওয়ান।

 আপনার বাচ্চা যদি মিষ্টি না হলে খেতে না চায়  তাহলে সেরেলাকে গুর অথবা তালমিসরি দিয়েও রান্না করতে পারবেন।

এখানে আপনি প্যাকেটের দুধও ব্যাবহর করতে পারেন আবার খাটি গরুর দুধও ব্যাবহার করতে পারে। আবার সুধু পানি দিয়েও সেরেলাকটি রান্না করতে পারবেন।

📝 মনে রাখার বিষয়:

🔹 খাবারের সাথে কলা, আপেল বা সফেদা মেশানো যাবে।
🔹 চিনির বদলে গুড় ব্যবহার করুন, এটি স্বাস্থ্যকর।
🔹 ১ বছরের নিচে শিশুকে বাদাম না দেওয়াই ভালো।
🔹 ৮ মাসের কম বয়সী শিশুদের ডাল খাওয়ানোর আগে খুব নরম করে রান্না করুন, যাতে সহজে হজম হয়।

এভাবে ঘরেই স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ শিশুখাদ্য তৈরি করুন, বাচ্চার পুষ্টি নিশ্চিত করুন! 

আরো জেনে নিন

🚼 ৬ মাস থেকে ১ বছর: শারীরিক দক্ষতা থেকে প্রথম পদক্ষেপ পর্যন্ত ✨


শীতের দিনে শিশুর গোসল করানো নিয়ে অনেক বাবা-মায়েরােই দিধা দন্দে পড়ে যায়। প্রতিদিন গোসল করালে ঠান্ডা লাগার ভয় থাকে, আবার না করালে শরীরে জমে থাকা ঘাম থেকে হতে পারে চুলকানি, ফুসকুড়ি ও চর্মরোগ। তাই শিশুর স্বাস্থ্য ও ত্বকের যত্ন নিতে হলে গোসলের নিয়ম জানা জরুরি।

🛁 শীতে শিশুর গোসল সুরক্ষা ও যত্ন  নাকে-মুখে পানি ঢুকলে কী করবেন 🚨❄️



🍼 নবজাতকের গোসলের নিয়ম

🔹 জন্মের প্রথম তিন দিন গোসল না করানোই ভালো।
🔹 ০-১ মাস বয়সে সপ্তাহে ২ দিন গোসল করান।
🔹 ১ মাসের পর থেকে প্রতিদিন গোসল করানো যেতে পারে।

গরমে বাচ্চাদের প্রতিদিন গোসল করাবেন। প্রতিদিন গোসল করালে বাচ্চাদের শরীর এবং মন ঝকঝকে পরিস্কার থাকে। তাতে শিশুরা আরামে বিশ্রাম করে এবং হেসে খেলে দিন পার করে। আর শীতেও গোসল করাবেন আর খুব বেশি ঠান্ডা হলে পানি গরম করে পাতলা কাপর ভিজিয়ে চিপে বাচ্চার শরীর মুছে দেবেন।

গোসলের আগে শিশুকে কিছুক্ষণ রোদে রাখলে শরীর উষ্ণ হবে এবং ভিটামিন-ডি শোষিত হবে, যা হাড়ের জন্য উপকারী।


💦 শীতে শিশুর গোসলের জন্য সঠিক পদ্ধতি

পানির তাপমাত্রা ঠিক রাখুন
শিশুর শরীরের তাপমাত্রার কাছাকাছি হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের আর্দ্রতা নষ্ট করতে পারে। পানি পাত্রে নিয়ে কিছুক্ষণ রোদে রাখলে তা আরামদায়ক হবে।

সাবান-শ্যাম্পুর বেছে নিন বুদ্ধিমানের মতো
বড়দের সাবানে থাকা ক্ষারীয় উপাদান শিশুর কোমল ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয়। বেবি সোপ, মাইল্ড শ্যাম্পু, বা গ্লিসারিনযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। এক দিন পর পর সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করাই ভালো।

গোসলের পরপরই যত্ন নিন

  • নরম তোয়ালে দিয়ে শিশুর শরীর আলতো করে মুছিয়ে নিন।
  • ত্বক শুকানোর আগেই বেবি লোশন বা ময়েশ্চারাইজার লাগান।
  • দ্রুত উষ্ণ কাপড় পরিয়ে দিন, যেন ঠান্ডা না লাগে।

কোন পরিস্থিতিতে প্রতিদিন গোসল নয়?
❄️ যদি শিশুর ঠান্ডা, সর্দি-কাশি বা নিউমোনিয়ার লক্ষণ থাকে।
❄️ খুব বেশি কুয়াশা বা ঠান্ডা পড়লে, বিশেষত অল্প ওজনের নবজাতকদের ক্ষেত্রে।
❄️ যেসব দিন ঠান্ডা খুব বেশি, সেদিন গরম পানিতে পাতলা কাপড় ভিজিয়ে শিশুর শরীর মুছিয়ে দিতে পারেন।

কোথায় গোসল করাবেন?
বাথরুম সাধারণত বেশি ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে থাকে, তাই বারান্দা বা ঘরে উষ্ণ পরিবেশে বাথটাবে বা গামলায় গোসল করানো ভালো।

গোসল শেষে আবার কিছুখন রোদে  রাখবেন। তাহলে বাচ্চাদের জ্বর আসবে না।

🛁 গোসলের সময় শিশুর নাকে-মুখে পানি ঢুকে গেলে কী করবেন? 🚨

🛁 গোসলের সময় শিশুর নাকে-মুখে পানি ঢুকে গেলে কী করবেন 🚨

শিশুর যত্নের সময় সবচেয়ে বেশি সতর্কতা দরকার গোসল করানোর সময়। একটু অসাবধান হলেই নাকে-মুখে পানি ঢুকে দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। তাই আগে থেকেই সচেতন থাকা জরুরি।

❄️ কেন শিশুর নাকে-মুখে পানি ঢুকে বিপদ হতে পারে?

শিশুর শ্বাসতন্ত্র খুব সংবেদনশীল। নাকে বা মুখে বেশি পানি ঢুকে গেলে তারা শ্বাস নিতে পারে না, ফলে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কখনো কখনো শিশু কাশতে শুরু করে বা নড়াচড়া কমিয়ে দেয়, যা বিপদের ইঙ্গিত হতে পারে।


🚨 যদি নাকে-মুখে পানি ঢুকে যায়, কী করবেন?

শিশুকে শান্ত রাখুন
হঠাৎ পানি ঢুকে গেলে ভয় না পেয়ে ঠান্ডা মাথায় কাজ করুন। শিশুকে কাঁধের ওপর নিয়ে হালকা করে পিঠে চাপ দিন, যেন সে কাশতে পারে এবং নাক-মুখ থেকে পানি বেরিয়ে আসে।

শিশুর মুখ নিচের দিকে রাখুন
শিশুকে এমনভাবে ধরুন যেন তার মাথা নিচের দিকে ঝুঁকে থাকে। এতে স্বাভাবিকভাবেই পানি বেরিয়ে আসবে।

পিঠে হালকা চাপ দিন
শিশুর পিঠে আলতোভাবে থাপড় দিন (একদম জোরে নয়), এতে তার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হতে পারে।

নাক পরিষ্কার করুন
নাকের ভেতর পানি ঢুকে গেলে নরম কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছে দিন। প্রয়োজনে শিশুর নাক পরিষ্কার করার জন্য নরম টিস্যু ব্যবহার করতে পারেন।

মুখ থেকে পানি বের হতে দিন
শিশু হালকা কাশতে থাকলে ভয় পাবেন না, এটি ভালো লক্ষণ। কাশি হচ্ছে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, যা নাকে-মুখে ঢোকা পানি বের করতে সাহায্য করে।

গভীর শ্বাস নিতে সাহায্য করুন
যদি শিশু স্বাভাবিকভাবে শ্বাস না নেয়, তাহলে কোলের ওপর নিয়ে সামনে-পেছনে দোলান এবং তার নাম ধরে ডেকে সচেতন করার চেষ্টা করুন।


🚫 যা করবেন না!

❌ শিশুকে মাথার ওপর উল্টো করে ধরে ঝাঁকাবেন না।
❌ মুখে ফুঁ দিতে যাবেন না, এতে শ্বাসনালীতে সমস্যা হতে পারে।
❌ সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন না, ধৈর্য ধরে শিশুর শ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করুন।


🛡️ কিভাবে আগে থেকে সতর্ক থাকবেন?

✔️ পানি ঢালা নয়, কাপড় ভিজিয়ে মুছুন
খুব ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে সরাসরি মাথায় পানি ঢালার পরিবর্তে গরম পানিতে পাতলা কাপড় ভিজিয়ে আলতোভাবে শরীর মুছিয়ে দিন।

✔️ শিশুর মুখ উপরের দিকে রাখবেন না
গোসলের সময় শিশুর মুখ সবসময় সামনের দিকে বা নিচের দিকে রাখুন। পিঠের দিকে হালকা পানি ঢাললে সমস্যা কম হবে।

✔️ শিশুকে কখনও একা রাখবেন না
এক মুহূর্তের জন্যও শিশুকে পানির মধ্যে একা রাখবেন না। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের অসাবধানতা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

✔️ গোসলের সময় কথা বলুন ও হাসিখুশি রাখুন
শিশু যদি রিল্যাক্স থাকে, তবে ভয় পাবে না এবং আচমকা নড়াচড়া কম করবে, এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যায়।

শিশুর সুস্থতা আমাদের সবার প্রথম দায়িত্ব। একটু সচেতন থাকলেই আমরা এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে পারি। ❤️✨

আরো ইনফো পরতে ক্লিক করুন

জীবনের শুরুতেই সেরা পুষ্টি: মায়ের দুধের অপরিহার্যতা

নবজাতকের জন্য গরুর দুধ: ক্ষতিকর প্রভাব ও মায়ের জন্য উপকারিতা

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো কিছু প্রচলিত ভুল ধারণার আসল সত্য জানুন

শিশুর শ্বাসকষ্ট এড়াতে দুধ খাওয়ানোর সময় যে বিষয়গুলো মনে রাখবেন

শিশুর গলায় দুধ আটকে গেলে দ্রুত কী করবেন: প্রাথমিক পদক্ষেপ

নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারির পর সহবাস: কখন নিরাপদ? জেনে নিন সঠিক সময়

প্রসবের পর সুস্থতা: পেলভিক ফ্লোর ব্যায়ামের মাধ্যমে শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতা ফিরে পাওয়ার জাদুকরী উপায়!


উপসংহার 🌸

শীতের দিনে শিশুর গোসল নিয়ে বাড়তি যত্ন ও সচেতনতা প্রয়োজন। নিয়ম মেনে গোসল করালে শিশুর ত্বক থাকবে স্বাস্থ্যকর, আরামদায়ক ও সংক্রমণমুক্ত। তবে সাবধানতার অভাব হলে ছোট্ট সোনামণির জন্য এটি বিপজ্জনকও হতে পারে। বিশেষ করে, গোসলের সময় শিশুর নাকে-মুখে পানি ঢুকে গেলে তাৎক্ষণিক সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

সতর্কতা মেনে পানি ব্যবহার, শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো শিশুর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই কখনোই শিশুকে একা গোসল করতে দেওয়া উচিত নয়, এবং সবসময় উষ্ণ পরিবেশে, নিরাপদভাবে গোসল করানোর চেষ্টা করতে হবে।

একটু যত্ন, ভালোবাসা আর সতর্কতায় শীতেও শিশুর গোসল হতে পারে আনন্দদায়ক ও নিরাপদ। আমাদের ছোট্ট সোনামণিদের সুস্থ রাখতে সাবধানতার কোনো বিকল্প নেই! ❤️✨

শিশুর শ্বাসকষ্ট একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা বাবা-মায়ের জন্য বেশ উদ্বেগজনক হতে পারে। শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, ব্রঙ্কিওলাইটিস, বা অ্যালার্জি। এ ধরনের পরিস্থিতি কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। তাই শিশুদের শ্বাসকষ্টের লক্ষণ চিহ্নিত করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

শিশুর শ্বাসকষ্ট কারণ, লক্ষণ ও করণীয়

চলুন, শিশুদের শ্বাসকষ্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

শ্বাসকষ্ট বোঝার উপায়

শ্বাসকষ্ট বোঝার উপায়


শিশুর শ্বাসকষ্ট রয়েছে কিনা, তা সহজে বুঝতে কিছু লক্ষণ সনাক্ত করতে হবে। এগুলির মধ্যে—

দ্রুত শ্বাস: স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত শ্বাস নেওয়া।
শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ: সাঁ সাঁ বা ঘড়ঘড় শব্দ শোনা যেতে পারে।
বুকের ওঠানামা: শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের পাঁজর ভেতরে ঢুকে যাওয়ার মতো মনে হতে পারে।
নাক ফোলানো: শ্বাস নেওয়ার সময় নাকের ছিদ্র বড় হয়ে যেতে পারে।
ত্বকের রঙ পরিবর্তন: ঠোঁট বা মুখের চারপাশ নীলচে হয়ে যেতে পারে।
অস্থিরতা: শিশু অস্থির হয়ে ওঠা বা অতিরিক্ত কাঁদতে থাকা।

এগুলি সবই শ্বাসকষ্টের লক্ষণ হতে পারে, যার জন্য দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।


শিশুর স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস হার

শিশুর বয়স অনুযায়ী তার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ভিন্ন হয়। নিম্নে তা উল্লেখ করা হল:

🔹 নবজাতক (০-১ মাস): প্রতি মিনিটে ৩০-৬০ বার।
🔹 ১ বছর পর্যন্ত: প্রতি মিনিটে ২৪-৪০ বার।
🔹 ১-৫ বছর: প্রতি মিনিটে ২০-৩০ বার।
🔹 ৫ বছরের বেশি: প্রতি মিনিটে ১২-২০ বার।

যদি আপনার শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস এই হার থেকে বেশি বা কম হয়, তবে তা শ্বাসকষ্টের ইঙ্গিত হতে পারে।


শিশুর ঘন ঘন শ্বাস নেওয়ার কারণ

শিশুর শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

🦠 নিউমোনিয়া: এটি ফুসফুসের একটি সংক্রমণ, যা সাধারণত জ্বর ও কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে।
🌬️ ব্রঙ্কিওলাইটিস: একটি ভাইরাসজনিত ফুসফুসের সংক্রমণ, যা শিশুদের মধ্যে বেশ সাধারণ।
😷 অ্যাজমা: শ্বাসনালীর প্রদাহজনিত সমস্যা, যা শ্বাস নিতে কষ্ট সৃষ্টি করে।
💔 হার্টের সমস্যা: জন্মগত হৃদরোগের কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
🤧 অ্যালার্জি: পরিবেশগত উপাদান, যেমন ধুলো বা পরাগের কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।


শিশুর শ্বাসকষ্ট হলে করণীয়

যদি আপনার শিশু শ্বাসকষ্টে ভোগে, তবে কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে হবে:

✔️ শিশুকে শান্ত রাখা: শিশুকে ঘাবড়ে যেতে দেবেন না।
✔️ শিশুকে সোজা বসানো: শিশুকে সোজা বসিয়ে বা দাঁড়িয়ে রাখুন, যেন শ্বাসপ্রশ্বাসে সহায়ক হয়।
✔️ খোলামেলা পরিবেশে রাখা: শিশু যাতে যথেষ্ট বাতাস পায়, সেজন্য খোলামেলা জায়গায় নিয়ে যান।
✔️ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া: যদি শ্বাসকষ্ট বাড়ে, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।


শিশুর শ্বাসকষ্টের ওষুধ

শিশুর শ্বাসকষ্টের চিকিৎসার জন্য কিছু সাধারণ ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ দেওয়া উচিত নয়। সাধারণত নিম্নলিখিত ওষুধ দেওয়া হয়:

💨 স্যালবিউটামল: এটি শ্বাসনালী প্রসারিত করে, যার ফলে শ্বাস নেওয়া সহজ হয়।
💊 কর্টিকোস্টেরয়েড: প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়।
🦠 অ্যান্টিবায়োটিক: ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থাকলে এটি ব্যবহৃত হয়।


শ্বাসকষ্ট কমাতে ইনহেলার ও নেবুলাইজার

শ্বাসকষ্ট কমাতে সাধারণত দুটি চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়:

🌫️ ইনহেলার: এটি দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে।
💨 নেবুলাইজার: এটি ওষুধকে বাষ্প আকারে ফুসফুসে পৌঁছে দেয়।


শ্বাসকষ্ট কমাতে সহায়ক খাবার

শিশুর শ্বাসকষ্ট কমাতে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ও খাবার সাহায্য করতে পারে:

🍯 মধু: এটি শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখতে এবং কাশি কমাতে সহায়তা করে।
🧄 রসুন: প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে।
🥭 ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল: কমলা, আমলকি, এবং লেবু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
🌿 আদা: এটি শ্বাসনালীর প্রদাহ কমায় এবং শ্বাসকষ্ট থেকে উপশম প্রদান করে।


আরো জেনে নিন

শীতে শিশুর যত্ন: চিকিৎসকদের পরামর্শে সুস্থ, উষ্ণ ও কোমল ত্বক নিশ্চিত করুন! ❄️👶

🌸 গরমে নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যা: মমতার ছোঁয়ায় সুরক্ষা

শীতকালে শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ

শীতের সময় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, ফলে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। বিশেষ করে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, যেমন ব্রঙ্কিউলাইটিস, নিউমোনিয়া ও অ্যাজমা এই সময়ে শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

শীতকালে শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ


এই সময়ে শিশুদের রোগের প্রকোপ কেন বাড়ে?

শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, ফলে শ্বাসনালীর সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে যেসব শিশু আগে থেকেই অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে ভুগছে, তাদের জন্য এই সময়টা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া—

🔹 ঠান্ডা পানি পান করা।
🔹 ঠান্ডার মধ্যে বাইরে বেশি সময় থাকা।
🔹 রাতে ফ্যান ছেড়ে ঘুমানো।
🔹 ধুলাবালি বা দূষিত বাতাসে চলাফেরা করা।

এসব কারণেই শিশুরা শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়।

শিশুর শ্বাসকষ্টের লক্ষণ

শিশুর শ্বাসকষ্ট আছে কি না, তা বুঝতে বাবা-মায়ের কিছু লক্ষণের দিকে খেয়াল রাখা উচিত—

✔️ শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট: শিশু স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে।
✔️ ঘন ঘন কাশি: শুষ্ক বা কফযুক্ত কাশি হতে পারে।
✔️ নাক দিয়ে পানি পড়া: সাধারণ ঠান্ডার সঙ্গে হতে পারে।
✔️ বুকের খাঁচার ওঠানামা: শ্বাস নিতে কষ্ট হলে বুকের নিচের অংশ স্পষ্টভাবে দেবে যাবে।
✔️ শ্বাস ছাড়তে বেশি কষ্ট হওয়া: অ্যাজমার লক্ষণ।

কোন বয়সের শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়?

🍼 ছয় মাস থেকে দুই বছর বয়সী শিশুরা এই সময়ে বেশি ভোগে, কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম।

সাধারণ ঠান্ডার লক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা

যেসব শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগছে না, তাদের ক্ষেত্রেও সাধারণ ঠান্ডা হতে পারে। এর লক্ষণ—

🔹 হালকা জ্বর ও কাশি।
🔹 নাক বন্ধ বা নাক দিয়ে পানি পড়া।
🔹 গলায় ব্যথা বা শুষ্কতা।
🔹 খেতে বা দুধ পান করতে অনীহা।

সাধারণ ঠান্ডা প্রতিরোধে বাবা-মায়েরা নিচের বিষয়গুলো মেনে চলতে পারেন—

✅ সন্ধ্যার পর শিশুকে বাইরে না নেওয়া।
✅ শীতের সময় শিশুকে গরম কাপড় পরানো।
✅ ঠান্ডা পানিতে গোসল না করানো।
✅ খালি পায়ে হাঁটতে না দেওয়া।
✅ শিশুদের ঠান্ডা খাবার বা পানি থেকে দূরে রাখা।

নবজাতকের শ্বাসকষ্ট হলে কী করবেন?

নবজাতকের শ্বাসকষ্ট হলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। কারণ, এ বয়সে শ্বাসকষ্ট গুরুতর হতে পারে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

আরো পড়ুন

শেষ কথা

শিশুর শ্বাসকষ্ট কোনো সাধারণ সমস্যা নয়। তাই লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসা আপনার শিশুকে সুস্থ রাখতে পারে।  প্রতিরোধের জন্য শিশুর যত্ন ও সঠিক নিয়ম মেনে চলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 🌿💙

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget