রমজানে রোজা রাখার জন্য ওষুধ খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখা কি শরিয়তসম্মত?

0

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি, সংযম এবং ইবাদতের বিশেষ সময়। প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর রোজা ফরজ। তবে শরীয়তে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে রোজা না রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তীতে তা কাজা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নারীদের জন্য এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো ঋতুস্রাব (পিরিয়ড বা হায়েজ)

রমজানে রোজা রাখার জন্য ওষুধ খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখা কি শরিয়তসম্মত


অনেক নারী পুরো রমজান মাস একটানা রোজা রাখতে চান এবং এজন্য ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ করার কথা ভাবেন। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কতটুকু অনুমোদিত? শরীয়ত ও চিকিৎসাশাস্ত্রের আলোকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।


মাসিক হলে রোজার বিধান

নারীদের মাসিককালীন সময়ে নামাজ ও রোজা পালন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি কোনো শাস্তি বা অভিশাপ নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ সহজিকরণ।

🔹 নামাজ: মাসিক চলাকালীন নামাজ পড়া নিষিদ্ধ, এবং এটি পরে কাজা করতেও হয় না।
🔹 রোজা: মাসিক হলে রোজা রাখা নিষিদ্ধ, তবে পরে কাজা করা ফরজ।

হাদিসের ভিত্তি:

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন—

“আমরা যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে থাকতাম এবং আমাদের পিরিয়ড হতো, তখন আমাদের রোজার কাজা আদায় করতে বলা হতো, কিন্তু নামাজের কাজা আদায় করতে বলা হতো না।”
(সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

এই হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, পিরিয়ড হলে রোজা রাখা যাবে না, তবে পরে তা কাজা করতে হবে।


ওষুধ খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখা যাবে কি?

রমজানে একটানা রোজা রাখার উদ্দেশ্যে ওষুধ খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখা জায়েজ কি না, তা নির্ভর করে কয়েকটি শর্তের ওপর।

১. শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে অনুমতি

🔹মাসিক বন্ধ থাকলে রোজা রাখা যাবে: ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী, কোনো নারী যদি ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ করেন এবং তার শরীরে মাসিক কোনো লক্ষণ না থাকে, তাহলে তিনি পবিত্র গণ্য হবেন এবং রোজা রাখতে পারবেন।

🔹 শরীরের ক্ষতি না হলে জায়েজ: শরীয়ত কখনো এমন কিছু করার অনুমতি দেয় না, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই ওষুধ খেয়ে মাসিক বন্ধ করলে যদি তা শরীরের ক্ষতির কারণ হয়, তবে তা গ্রহণ করা ইসলামসম্মত হবে না।

২. চিকিৎসাশাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা

পিরিয়ড বন্ধের ওষুধ গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন:

✔️ হরমোনজনিত সমস্যা: নিয়মিত মাসিক বন্ধ রাখলে হরমোনের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
✔️ গর্ভধারণে সমস্যা: কিছু কিছু ওষুধ ভবিষ্যতে গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
✔️ শারীরিক অসুস্থতা: মাথাব্যথা, ক্লান্তি, বমিভাব, রক্তচাপের তারতম্য ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

৩. অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি

যদি কেউ ওষুধ খাওয়ার কথা চিন্তা করেন, তাহলে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক যদি মনে করেন, ওষুধ গ্রহণে শরীরের কোনো ক্ষতি হবে না, তাহলে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে শরীরের ক্ষতি হলে, তা গ্রহণ করা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকেও অনুচিত হবে।


স্বাভাবিক নিয়ম মেনে নেওয়াই উত্তম

ইসলামে নারীদের ঋতুস্রাবকে কোনো ত্রুটি বা অভিশাপ হিসেবে দেখা হয় না। বরং এটি আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি, যা নারীদের স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়ার অংশ। তাই পিরিয়ড হলে আল্লাহর দেওয়া বিধান মেনে চলাই উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ।

আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তা মেনে নেওয়াই প্রকৃত প্রজ্ঞার পরিচায়ক।
রমজানে ইবাদতের গুরুত্ব থাকলেও শরীরের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়াও জরুরি।
অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা এড়িয়ে স্বাভাবিক নিয়ম মেনে নেওয়াই শ্রেষ্ঠ পথ।

আরো পড়ুন

রোজা ধরে মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হলে করণীয় কি?


শেষ কথা

ওষুধ খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ করে রোজা রাখা শরীয়তসম্মত হতে পারে, তবে তা নির্ভর করে শরীরের ওপর এর প্রভাবের ওপর। যদি এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, তবে তা গ্রহণ করা অনুচিত। ইসলাম কখনো নিজের শরীরের প্রতি জুলুম করার অনুমতি দেয় না।

অতএব, আল্লাহর দেওয়া স্বাভাবিক বিধানকে মেনে নিয়ে পিরিয়ডের সময় রোজা না রাখা এবং পরে কাজা করে নেওয়াই অধিক উত্তম ও সওয়াবের কাজ।

💙 আল্লাহর বিধান খুশি মনে গ্রহণ করাই একজন মুসলিম নারীর জন্য শ্রেষ্ঠ পথ!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !