অনেকেই কোর্ট ম্যারেজ বিষয়ে জেনে থাকবেন। আসলে আমরা কি জানি, কোর্ট ম্যারেজ কি? কোর্ট ম্যারেজ করলে কি বিয়ে শুদ্ধ হয়? অজ্ঞতার কারণে মূলত অনেকেই কোর্ট ম্যারেজ করে বিয়ে করে থাকেন। এই সম্পর্কে আইনে কি আছে সেই বিষয়ে আমরা কি জানি?
বর্তমানে কোর্ট ম্যারেজ খুব একটা শুনা যায় না। তবুও কোথাও না কোথাও কোর্ট ম্যারেজ করে বিয়ে করার কথা শুনা যায়। যাইহোক, কোর্ট ম্যারেজ কি এবং আইনে এই বিষয়ে কি আছে?
কোর্ট ম্যারেজ কি?
কোন যুগল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য আদালতের মাধ্যর স্বীকারোক্তি প্রদান করাকে কোর্ট ম্যারেজ বলা হয়। আইনি পরিভাষা হচ্ছে- যুবক-যুবতি বা নারী-পুরুষ, স্বামী-স্ত্রী হিসাবে একত্রে বসবাস করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে যে হলফনামা সম্পাদন করে, সাধারণত তাই কোর্ট ম্যারেজ নামে পরিচিত।
তবে এটাকে আইনগতভাবে বিবাহ বলা যায় না। কেননা বাংলাদেশে আইনে কোর্ট ম্যারেজ এর কোন ভিত্তি নেই। তার মানে এভাবে যারা বিয়ে করেন তাদের বিয়ে কোনভাবেই হয় না।
অর্থাৎ এখানে না ইসলামি নীতি মেনে বিয়ে হয়, না প্রচলিত আইন মানা হয়। যদি কেউ কোর্ট ম্যারেজ করে বিয়ে করেন, তাহলে তাকে অবশ্যই বিবাহের শর্তগুলো (প্রচলিত আইন ও নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি) পূর্ণন করতে হবে। নতুবা বিয়ে শুদ্ধ হবে না।
কোর্ট ম্যারেজ এর আইনি প্রক্রিয়া কি?
The Muslim marriages and Divorces (Registration) Act, 1974 এর ৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, অন্য আইনে যাহাই থাকুক না কেন, মুসলিম আইনের অধীন সকল বিবাহ নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করতে হবে। সুতরাং কোর্ট ম্যারেজ বলে কোন কিছু আইনে নেই।
কেননা কোর্ট ম্যারেজ হলো যুবক-যুবতি বা নারী-পুরুষ, স্বামী-স্ত্রী হিসাবে একত্রে বসবাস করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে যে হলফনামা সম্পাদন করে, সাধারণত তাই কোর্ট ম্যারেজ নামে পরিচিত।
এইরূপ কোন বিয়ে যদি নিকাহ রেজিস্ট্রারের অফিসে রেজিস্ট্রি না করা হয়, তাহলে সেই বিয়ের আইনগত কোন ভিত্তি থাকবে না। কোন এক সময় যদি এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ত্যাগ করে, তাহলে অন্য পক্ষ আইনগত কোন প্রতিকার পাবেনা। এফিডেভিট বা হলফনামা শুধুই একটি ঘোষণাপত্র।
পঞ্চাশ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে কিংবা একশত পঞ্চাশ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে গিয়ে হলফনামা করাকে বিয়ে বলে অভিহিত করা যায় না। আইনানুযায়ী কাবিননামা রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেই কেবল ঘোষণার জন্য এফিডেভিট করা যাবে।
কোর্ট ম্যারেজ করে বিয়ে করলেও প্রতারিত হতে পারে কেন?
আবেগঘন সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক তরুণ তরুণীর ভুল ধারণা করেন যে, শুধু এফিডেভিট করে বিয়ে করলে বন্ধন শক্ত হয়। নিকাহ রেজিস্ট্রারের অফিসে বিয়ের জন্য বিরাট অঙ্কের ফিস দিতে হয় বলে কোর্ট ম্যারেজকে অধিকতর ভাল মনে করে তারা। কিন্তু এটা সঠিক নয়।
মনে রাখতে হবে, যদি কাবিন রেজিস্ট্রি করা না হয়, তাহলে স্ত্রী মোহরানা আদায় করতে ব্যর্থ হতে পারে। অধিকিন্তু আইন অনুযায়ী তার বিয়ে প্রমান করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। তাই এই ক্ষেত্রে সঙ্গী কর্তৃক প্রতারিত হবার সম্ভাবনা অধিক। সুতরাং সকল ক্ষেত্রেই নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে হবে।
আমাদের দেশে কোর্ট ম্যারেজ করে বিয়ে করেও অনেকে প্রতারিত হয়েছে। আর এই বিয়ের আইনগত কোন ভিত্তি না থাকায় পরবর্তীতে আইনগত কোন পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয় না।
বিয়ে রেজিস্ট্রি করা কেন জরুরী?
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) আইন, ১৯৭৪-এর ধারা ৫ (২) অনুযায়ী, যে ক্ষেত্রে একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার ব্যতিত অন্য ব্যক্তি দ্বারা বিবাহ অনুষ্টিত হয়, সেক্ষেত্রে বর বিবাহ অনুষ্টানের তারিখ থেকে পরবর্তী (৩০) ত্রিশ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্ট্রারের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
উক্ত আইনের ৫ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, এরকম প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর নিকাহ রেজিস্ট্রার বিবাহটি তাৎক্ষণিক রেজিস্ট্রি করবেন।
উক্ত আইনের ধারা ৫ (৪) অনুযায়ী, বিবাহ রেজিস্ট্রি না করে অত্র আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে, দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। সুতরাং সর্বক্ষেত্রেই নিকাহ রেজিস্ট্রার দ্বারা বিবাহ রেজিস্ট্রি করা উচিৎ।
আরো জানুন: