টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি? কিভাবে খাবেন টক দই?

Home BD info
0
পৃথীবির সবচেয়ে শ্রেষ্ট সম্পদ কি? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো একেক জন একেক রকম উত্তর প্রদান করবেন। কিন্তু কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, আপনার শরীর যদি ভালো না থাকে তাহলে কোন সম্পদই আপনাকে প্রশান্তি দিতে পারবে না। যাইহোক শান্তি পেতে চাইলে দেহকে সুস্থ রাখতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন কিছু নিয়ম-কানুন ও খাদ্যভাস সঠিকভাবে গড়ে তোলা। যাইহোক আজকে আলোচনা করবো “টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি? কিভাবে খাবেন টক দই?”

টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি? কিভাবে খাবেন টক দই?

মানুষের জীবনে সকল উপকারী খাদ্যের মধ্যে দই একটি অন্যতম খাবার। এটি দুধ থেকে তৈরি হওয়ায় পুষ্টিগুণ রয়েছে অধিক মাত্রায়। শুধুমাত্র টক দই পুষ্টিগুণে ভরপুর নয়, এতে রয়েছে শরীরের জন্য নান উপকারি উপাদান। যেমন- ভিটামিন, আমিষ, মিনারেল ইত্যাদি।

টক দই খাওয়া প্রয়োজন কেন?

খাদ্য তালিকাতে নিয়মিত টক দই রাখা একান্তু প্রয়োজন। কেননা নিয়মিত টক দই খেলে নানা উপকার পাওয়া যায়। শরীর সুস্থের জন্য এই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ টক দই দারুন ভুমিকা পালন করে থাকে।

টকদইয়ে রয়েছে বিভিন্ন উপকারি ব্যাকটেরিয়া, যারা দেহের উপকার করে। অর্থাৎ এরা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিকে ধ্বংস করে দেয়। এছাড়াও দইয়ে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বিটামিন ৬, ভিটামিন বি১২, ফসফরাস ইত্যাদির মতো উপাদান।

উক্ত উপাদানগুলো শরীরের নানা উপকার করে থাকে। ডেইলী টক দই খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যারা দুধ খেলে সমস্যায় পড়েন কিংবা দুধ খেতে অসুস্থিবোধ করেন তাদের জন্য দই হতে পারে একটি দারুন সমাধান।

দুধ না খাওয়ায় শরীরের যে ঘাটতি তৈরি হয় তা দই দিয়ে পূরণ করতে পারেন সহজেই। এটি দুধের অভাব পূরণ করে এবং সহজে হজম হয়। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকায়এটি রাখুন।


এগুলো আপনার কাজে লাগতে পারে





দই খাওয়ার উপকারিতা কি?

দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার হচ্ছে টক দই। এটি খাওয়ার সাথে সাথে শরীরের উপকার পাওয়া যায়। দেহের নানা উপকার করে থাকে এই দই। নিচে দইয়ের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

হাঁড়ের গঠন ও দাঁত মজবুত করে টক দই

দইয়ে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি দেহের হাঁড় গঠনে সহায়তা করে এবং হাঁড়কে করে শক্তিশালী।

দেহের হাঁড়কে শক্তিশালী করতে নিয়মিত দই খেতে পারেন। শুধু দেহের হাঁড়কে শক্তিশালী করে তা কিন্তু নয়, নিয়মিত দই খেলে আপনার দাঁতও শক্ত ও মজবুত হবে।

তাই আপনি নিয়মিত টক দই খেতে পারেন।

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে টক দই খান

দইয়ে থাকে অসংখ্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা শরীরের অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেহকে রাখে সুস্থ। শুধু কি তাই? টক দই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুবই কর্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে।

আপনি যদি নিয়মিত টক দই খান তাহলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। এছাড়াও টক দইয়ে রয়েছে ল্যাকটিক এসিড যা ডায়রিয়া প্রতিরোধেও বেশ কর্যকর ভুমিকা পালন করে।

এছাড়াও টক দই শরীরে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ জমতে বাধা দেয় এবং দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে শরীরকে সুস্থ রাখে। বার্ধক্যও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এটি।

সুতরাং শরীরকে সুস্থ ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে টক দই নিয়মিত খেতে পারেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে টক দইয়ের ভূমিকা

টক দইয়ে রয়েছে ল্যাকটিক এসিড যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এই খাদ্যটি নিজেও সহজেই হজম হয় এবং অন্য খাবারকেও সহজেই হজম করতে সাহায্য করে। 

মানুষের হজম শক্তি যত ভালো থাকে শরীরও তত সুস্থ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষতাও স্বাভাবিক থাকে। আর টক দই হজম শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও হজম শক্তি বাড়ায় কোন কোন খাবার বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

অনেকের দুধ খেতে সমস্যা হয় কিংবা দুধ খেলে গড়হজম বা পেটের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। দুধ খেলে যাদের এই ধরনের সমস্যা হয় তারা দই খেতে পারেন। কেননা দইয়ে থাকা আমিষ দুধের আমিষের চেয়ে সহজে হজম হয়। শুধু তাই নয় আপনার হজম শক্তিও বাড়াবে এই দই।

তাই এই দই খেলে দুধের পুষ্টিও পাবেন আবার হজম শক্তিও বৃদ্ধির পাশাপাশি শরীরকে রাখবে সুস্থ। সুতরাং দুধের বিকল্প হিসাবে খেতে পারেন এই খাবার।

ওজন কমাতে খেতে পারেন টকদই

আপনার দেহের ওজন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি কিংবা বেশি হলে তা কমাতে একটি কার্যকরি উপাদান হতে পারে দই। কেননা দই খেলে এতে থাকা আমিষের কারণে পেট ভরা থাকে দীর্ঘ সময়। ফলে আপনাকে অন্য খাবার খেতে ইচ্ছা করবে না।

অর্থাৎ ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ। আর দই আপনাকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করবে। অন্য খাবার না খাওয়ার ফলে আপনার ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে।

তাই ওজন কমাতে নিয়মিত খেতে পারেন টক দই।

দই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কি ভূমিকা রাখে?

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খুবই উপকারী একটি খাবার হচ্ছে দই। আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে প্রতিদিন এককাপ টকদই খান। নিয়মিত কয়েকদিন খাওয়ার পরেই দেখবেন উচ্চ রক্তচাপ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।

টক দই উচ্চরক্তচাপের পাশাপাশি দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে শরীর অধিক সুস্থতা লাভ করে। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দই হতে পারে আপনার একটি নিয়মিত খাবার।

এছাড়াও যারা ডায়াবেটিস রোগে ভোগেন, তাদেরকেও নানা উপকার করে থাকে টক দই । ডায়াবেটিস এর পাশাপাশি হৃদরোগের ক্ষেত্রেও এই দই খাওয়াতে উপকার পাওয়া যায়।

টক দই খাওয়ার নিয়ম : টক দই খাবেন কিভাবে?

টক দই শরীরের জন্য কত উপকারী তা আমরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছি। কিন্তু কখন কিভাবে দই খেলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে তা নিয়ে এখন আলোচনা করবো। কেননা নিয়ম বহির্ভূত দই খেলে তেমন বেশি উপকার পাওয়া যায় না।

সাধারণত দুপুরের খাবারের পর দই খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এই সময় দই থেকে দেহ পুরো পুষ্টি পায়। তবে যে কোন সময় খাওয়া হোক না কেন দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রামের বেশি এই খাবার খাওয়া উচিৎ নয়।

চাইলে আপনি দই দিয়ে বোরহানি বা শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। আবার খালিও খেতে পারেন। মনে রাখবেন, দই খালি খেলেই বেশি উপকার পাওয়া যায়।

এছাড়াও দই বিভিন্ন ফলের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। যেভাবেই খান না কেন এ থেকে উপকার অবশ্যই পাবেন। শুধু একটু সতর্ক থাকবেন যেন দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রামের বেশি দই খাওয়া না হয়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় টক দই কি খাওয়া যায়?

আমাদের দেশে অনেকেই ভাবেন গর্ভাবস্থায টক দই খাওয়া যায় না। বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা এই বিষয়ে বেশি সতর্ক,তারা গর্ভবতী মা কে দই খেতে দেন না। কিন্তু জানেন কি গর্ভবস্থায় টক দই খাওয়াতে রয়েছে বিশেষ উপকারিতা। এই দই মা ও বাচ্চা উভয়ের জন্য অনেক ভাল।

গর্ভবতী মায়ের খাবারে তালিকা কিংবা গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবারের তালিকা কেমন হওয়া উচিৎ তার বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। আর মা ও শিশুর শারীরিক সুস্থতায় টক দই একটি অত্যান্ত দরকারি খাবার।

দুদ্ধজাত অন্য কোন খাবারের চেয়ে দই এর পুষ্টি উপাদান ও চাহিদা পূরণের ক্ষমতা অনেক বেশি। তবে মিষ্টি দই খেলে এসিড হওয়ার সম্ভবনা থাকে। টক দই গর্ভবতী মায়ের হজম শক্তির ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে নানা রকম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

টক দই যেহেতু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই গর্ভবতী মায়েকে সুরক্ষা দিবে এই দই। শুধু তাই নয়, এটি শরীর ঠান্ডা রাখা সহ আরো বহু উপকার করে থাকে। সুতরাং গর্ভাবস্থায় এ দই খাওয়া যায়। এতে কোন ক্ষতি নেই, বরং বহু উপকারিতা রয়েছে।

টক দই দিয়ে কি কি খাওয়া যায়?

বিভিন্ন প্রকার খাবারের সাথে টক দই মিশিয়ে খাওয়া যায়। সালাদের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। বিভিন্ন সালাদ যেমন- টমেটোর সালাদ, শশা কিংবা অন্য কোন সলাদের সাথে দই মিশিয়ে খেতে পারেন এবং এদের সাথে বিট লবণও মিশিয়ে খেতে পারেন।

আবার বিভিন্ন শরবত এর সাথে দই মিশিয়ে খেতে পারেন। যেমন- টক দইয়ের সাথে বিট লবন, গোল মরিচ গুড়া, পুদিনা বাটা ইত্যাদি মিশিয়ে শরবত তৈরি করে খাওয়া যায়। অনেকে বিভিন্ন তরকারিতে দই ব্যবহার করে থাকেন। এতে তরকারীর স্বাদ ও পুষ্টি বেড়ে যায়।

রাতের বেলা কি টক দই খাওয়া যায় কিংবা রাতে টক দই খেলে কি হয়?

রাতে টক দই খেলে তেমন কোন সমস্যা হয় না। তবে হজমের সমস্যা থাকলে রাতে চিনি মিশিয়ে দই খাওয়া উচিৎ। এছাড়া যাদের ঠান্ডা লাগার সমস্যা আছে তারা রাতের বেলা এই দই এড়িয়ে চলবেন। কেননা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে সন্ধার পর দই খেলে গলায় মিউকাস জমা হতে পারে। ফলে গলায় জ্যাম লাগতে পারে।

সাধারণ যাদের ঠান্ডা লাগার সম্ভবনা আছে তারা রাতে টক দই খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। ঠান্ডা লাগার সম্ববনা বেড়ে যায় সন্ধার পর দই খেলে। অনেকের সর্দি, কাশি কিংবা গলা ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া রাতে দই খেলে তেমন কোন সমস্যা বা ক্ষতি নেই। তাই চাইলে আপনি রাতেও খেতে পারেন এই খাদ্য।

টক দই এর অপকারিতা কি?

টক দই এমন একটি পুষ্টিকর খাবার যে, এই খাবার গ্রহণে তেমন কোন অপকারিতা বা ক্ষতি নেই। প্রায় সব ক্ষেত্রে এই খাবার খেলে উপকারিতাই বেশি পাওয়া যায়। তবে দইয়ের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে এর পুরো উপকারিতা পাওয়া যায় না।

যাদের ঠান্ডা লাগার সম্ভবনা রয়েছে তারা রাতের বেলা না খেয়ে দুপুরে খেতে পারেন, ঠান্ডা লাগার সম্ভবনা থাকলে রাতে না খাওয়াই ভালো। কেননা রাতে দই খেলে এতে সহজেই ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই এই ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বণ করা উচিত।

শেষকথাঃ

টক দই এমন একটি সু-পরিচিত এবং জনপ্রিয় খাবার যার কোন অপকারিতা বা ক্ষতি নেই। টকের কারণে অনেকে ক্ষেতে চান না। তবে টকের কথা না ভেবে পুষ্টিগুণের কথা ভাবা উচিৎ এবং নিয়মিত খাওয়াও শরীরের জন্য অনেক ভালো।

এই খাবার আমাদের দেহে নানা রকম উপকার করার পাশাপাশি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। এটি খেলে তেমন কোন ক্ষতি হয় না, বরং সর্বদা উপকার পাওয়া যায় । তাই আপনি নিয়মিত এটি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।


অন্যান্য ইনফো জানুন







Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Accept !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !