বাংলা ভাষার সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্য এবং আঞ্চলিক কথ্য রীতি কি?

0

সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্য: বাংলা ভাষার দুটি প্রধান রীতি হলো সাধু চলিত। সাধু ভাষা ব্যাকরণের সুনির্দিষ্ট সুনির্ধারিত নিয়মের অনুসারী। এতে তৎসম শব্দের ব্যবহার বেশি। এর ক্রিয়াপদ সর্বনাম পদগুলো পূর্ণাঙ্গ রূপ। এর বাক্য গঠন অপরিবর্তনীয়। এর শৈলী গুরুগম্ভীর আভিজাত্যের অধিকারী। আজকের এই ইনফোটিতে আমরা আলোচনা করবো “বাংলা ভাষার সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্য এবং আঞ্চলিক কথ্য রীতি কি”

বাংলা ভাষার সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্য এবং আঞ্চলিক কথ্য রীতি কি?

চলিত ভাষা ব্যাকরণের সুনির্দিষ্ট ব্যাকরণ এখনও তৈরি হয়নি। এতে অর্ধতৎসম, তদ্ভব, দেশি বিদেশি শব্দের ব্যবহার বেশি। এর ক্রিয়াপদ সর্বনাম পদগুলো সংক্ষিপ্ত রূপ। এর বাক্য গঠন পরিবর্তনশীল। এর শৈলী সহজ স্বাভাবিক।

সাধু ভাষা সাধারণত সাহিত্য রচনায়, সরকারি দলিলপত্রে, ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। চলিত ভাষা সাধারণ কথাবার্তায়, সাংবাদিকতায়, বিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়।

সাধু চলিত ভাষার মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয় মূলত ক্রিয়াপদ সর্বনাম পদে। সাধু ভাষায় ক্রিয়াপদ সর্বনাম পদগুলো পূর্ণাঙ্গ রূপ, যেমন:

  • সাধু ভাষা: আমি যাইতেছি, তাহারা আসিতেছেন
  • চলিত ভাষা: আমি যাচ্ছি, তারা আসছেন

সাধু ভাষা চলিত ভাষার মিশ্রণকে গুরুচণ্ডালী ভাষা বলে। গুরুচণ্ডালী ভাষা লেখার ক্ষেত্রে পরিহার করা উচিত।

(toc) #title=(ইনফোটি এক নজরে দেখুন)

বাংলা ভাষার সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্য কি?

সাধু রীতিঃ

  • বাংলা লেখ্য সাধু রীতি সুনির্ধারিত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসরণ করে চলে এবং এর পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট ।
  • এ রীতি গুরুগম্ভীর ও তৎসম শব্দবহুল।
  • সাধু রীতি নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার অনুপযোগী।
  • এ রীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ এক বিশেষ গঠনপদ্ধতি মেনে চরে।

চলিত রীতিঃ

  • চলিত রীতি পরিবর্তনশীল। একশ বছর আগে যে চলিত রীতি সে যুগের শিষ্ট ও ভদ্রজনের কথিত ভাষা বা মুখের বুলি হিসেবে প্রচলিত ছিল, কালের প্রবাহে বর্তমানে তা অনেকটা পরিবর্তিত রুপ লাভ করেছে।
  • এ রীতি তদ্ভব শব্দবহুল।
  • চলিত রীতি সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য এবং বক্তৃতা, আলাপ- আলোচনা ও নাট্যসংলাপের জন্য বেশি ‍উপযোগী।
  • সাধু রীতিতে ব্যবহৃত সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ চলিত রীতিতে পরিবর্তিত ও সহজতর রুপ লাভ করে। বহু বিশেষ্য ও বিশেষণের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে।

 

আঞ্চলিক কথ্য রীতি

সব ভাষারই আঞ্চলিক রুপের বৈচিত্র থাকে, বাংলা ভাষারও তা আছে। বিভিন্ন অঞ্চলে কথিত রীতির বিভিন্নতা লক্ষিত হয়, আবার কোথাও কোথাও কারো কারো উচ্চারণে বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষার মিশ্রণও লক্ষ করা যায়। যেমন ঢাকা ও গাজীরপুর জেলায় বিভিন্ন অঞ্চলের লোক বসবাস করায় এ অঞ্চলের মানুষের কথায় বিভিন্ন উপভাষার মিশ্রণ লক্ষ করা যায়।

 

সাধু, চলিত ও কথ্য রীতির উদাহরণ

সাধু রীতি : পরদিন প্রাতে হেডমাস্টার সাহেবের প্রস্তুত লিস্ট অনুসারে যে তিনজন শিক্ষক সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ করিবার অনুমতি পাইয়াছিলেন, তাঁহারা আটটার পূর্বেই ডাক-বাংলায় উপস্থিত হইলেন একটু পরে আবদুল্লাহ আসিয়া হাজির হইলতাহাকে দেখিয়া একজন শিক্ষক জিজ্ঞাসা করিলেন- আপনি যে! আপনার নাম তো হেডমাস্টার লিস্টে দেন নাই

উপরের অনুচ্ছেদ এ বোল্ড করা শব্দগুলো যেমন- সাহেবের, সহিত, সাক্ষাৎ,পাইয়াছিলেন, তাঁহারা,  পূর্বেই, উপস্থিত হইলেন ইত্যাদি হলো সাধু রীতির উদাহরণ।

 

চলিত রীতি : পুল পেরিয়ে সামনে একটা বাঁশ বাগান পড়ল। তারি মধ্য দিয়ে রাস্তা । মচমচ করে শুকনো বাঁশ পাতার রাশ ও বাঁশের খোসা জুতোর নিচে ভেঙ্গে যেতে লাগল। পাশে একটা ফাঁকা জায়গায় বুনো গাছপালা লতা ঝোপের ঘন সমাবেশ। সমস্ত ঝোপটার মাথা জুড়ে সাদা সাদা তুলোর মতো রাধালতার ফুল ফুটে রয়েছে।

চলিত রীতির শব্দগুলো হচ্ছে- পুল পেরিয়ে, মধ্য দিয়ে, ভেঙ্গে যেতে লাগল, ফুল ফুটে রয়েছে ইত্যাদি।

উপরের সাধু ও চলিত রীতির অনুচ্ছেদ এ ভাষার উপাদানের সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্য নিচে দেখানো হলো।

সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্যিঃ

পদ

সাধু

চলিত

বিশেষ্য

মস্তক

মাথা

বিশেষ্য

জুতা

জুতো

বিশেষ্য

তুলা

তুলো

বিশেষণ

শুষ্ক/শুকনা

শুকনো

সর্বনাম

তাঁহারা/উহারা

তাঁরা/ ওরা

সর্বনাম

তাহাকে/উহাকে

তাকে/ওকে

সর্বনাম

তাহার/তাঁহার

তার/তাঁর

ক্রিয়া

করিবার

করবার/করার

ক্রিয়া

পাইয়াছিলেন

পেয়েছিলেন

ক্রিয়া

হইলেন

হলেন

ক্রিয়া

আসিয়া

এসে

ক্রিয়া

হইল

হল/হলো

ক্রিয়া

দেখিয়া

দেখে

ক্রিয়া

করিলেন

করলেন

ক্রিয়া

দেন নাই

দেননি

ক্রিয়া

পার হইয়া

পেরিয়ে

ক্রিয়া

পড়িল

পড়ল/পড়লো

ক্রিয়া

করিয়া

করেঙ

ক্রিয়া

ভাঙ্গিয়া যাইতে লাগিল

ভেঙ্গে যেতে লাগল

ক্রিয়া

ফুটিয়া রহিয়াছে

ফুটে রয়েছে

অব্যয়

পূর্বেই

আগেই

অব্যয়

সহিত

সঙ্গে/সাথে


বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। তবে, বেশিরভাগ ভাষাবিদদের মতে, বাংলা ভাষার উৎপত্তি প্রাকৃত ভাষা থেকে। প্রাকৃত ভাষা ছিল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের কথ্য ভাষা। এই ভাষা থেকেই বিভিন্ন উপভাষার বিবর্তন ঘটে। এর মধ্যে একটি উপভাষা হলো মাগধী অপভ্রংশ। মাগধী অপভ্রংশ থেকেই বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটে।

বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে আরেকটি মতবাদ হলো, বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত। তবে, এই মতবাদের পক্ষে তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা হচ্ছে-

প্রাকৃত ভাষামাগধী অপভ্রংশবাংলা ভাষা

বাংলা ভাষার উৎপত্তি প্রক্রিয়াটি প্রায় এক হাজার বছর ধরে চলে। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার মিশ্রণ ঘটে এবং এর ফলে বাংলা ভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলো গড়ে ওঠে।


আরো জানুন

বাংলা ভাষারীতি কি? কেন এটি জানা জরুরী?

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Yes, got it !) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Read Our Policy
Accept !